শিক্ষা স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি সমন্বয়ে হব বিশ্বশক্তি
সততা
সৃজনশীলতা
নেতৃত্ব
News Update :
শিক্ষা
“স্বাস্থ্য ও শিক্ষা পরস্পর সম্পর্কযুক্ত”। আর এই সম্পর্ককে বোধগম্য করতে সামছউদ্দীন-নাহার শিক্ষা ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রের অধীনে উদ্দীপন বদর-সামছু বিদ্যানিকেতন শিরোনামে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ছাত্র-ছাত্রীদের শারীরিক ও মানসিক ভাবে বিকশিত করা, পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন করাই এই কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য। শুধু যে পুঁথিগত শিক্ষা একটি মানুষের জীবনকে পরিচালনার জন্য যথেষ্ট নয়, এই কার্যক্রম সেই শিক্ষা দান করে। যদি শারীরিক ভাবে একজন ছাত্র বা ছাত্রী সুস্থ না থাকে, তবে তার শিক্ষাও ব্যাহত হয়। আর শরীরিক ভাবে সুস্থ থাকতে একজন শিক্ষার্থীকে নিয়মিত খেলাধুলা করতে হবে, সঙ্গে সুষম খাবার গ্রহণ করতে হবে। মানসিক স্বাস্থ্যের সুস্থতার জন্য শিক্ষা সহায়ক কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত হতে হবে। এভাবেই সামছউদ্দীন-নাহার শিক্ষা ও স্বাস্থ্য কেন্দ্র তার অভিষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে চলছে।
উদ্দীপন বদর-সামছু বিদ্যানিকেতন-এ শিক্ষা কার্যক্রম তিনটি পর্যায়ে সম্পন্ন করা হয়। প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক পর্যায়। আর এই তিনটি পর্যায় সূচারু ভাবে পরিচালিত করতে প্রাক শাখায় ৩জন, প্রাথমিক শাখায় ৬জন এবং মাধ্যমিক শাখায় ১১জন সুযোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা কর্মরত আছেন। শিক্ষকদের সাফল্য প্রস্ফুটিত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের ফলাফলের মাঝে। কোভিড মহামারির মহাপ্রলয়ের মাঝেও গত ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের এস.এস.সি পরীক্ষায় তিনজন শিক্ষার্থী জি.পি.এ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। বিগত কয়েক বছর এস.এস.সি পরীক্ষায় জি.পি.এ-৫ ও পাশের হারের দিক দিয়ে অত্র উপজেলায় প্রথম সারিতে অবস্থান করছে এই প্রতিষ্ঠান।
অন্যান্য শিক্ষার্থীদের ফলাফলও প্রসংশনীয় এবং শতভাগ উত্তীর্ণ। এমনই সব ফলাফল নিয়ে মাথাউচু করে অগ্রসরমান উদ্দীপন বদর-সামছু বিদ্যানিকেতন
(ক) প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা
৫ থেকে ৬ বছরের কোমলমতি শিশুদের জন্য খেলার মাধ্যমে শিক্ষার ব্যবস্থা একটি অত্যন্ত কার্যকরী পদ্ধতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই বয়সের শিশুদের জন্য শিক্ষা শুধুমাত্র বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি একটি আনন্দময় এবং সৃজনশীল অভিজ্ঞতা হওয়া উচিত। খেলার মাধ্যমে শেখার ফলে শিশুরা আনন্দের সাথে বিভিন্ন বিষয় শিখতে পারে, যা তাদের মানসিক এবং শারীরিক বিকাশে সহায়ক হয়।
শিক্ষার এই প্রক্রিয়ায় বাংলা ও ইংরেজি কবিতা, গান শেখানোর জন্য ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সহজেই বিভিন্ন ভাষার শব্দভাণ্ডার এবং উচ্চারণ শিখতে পারে। ডিজিটাল মিডিয়া যেমন ভিডিও, অ্যানিমেশন এবং ইন্টারেক্টিভ গেমস শিশুদের শেখার প্রক্রিয়াকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।
শিশুদের জন্য একটি আনন্দঘন পরিবেশ নিশ্চিত করতে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, আধুনিক শিক্ষা উপকরণ এবং স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ বসার ব্যবস্থা রয়েছে। এই ধরনের পরিবেশে শিশুদের শেখার আগ্রহ বৃদ্ধি পায় এবং তারা নিজেদেরকে মুক্ত মনে প্রকাশ করতে পারে। সঠিক উচ্চারণ এবং ভঙ্গি শেখানো আমাদের আরেকটি লক্ষ্য, যা শিশুদের ভবিষৎ শিক্ষা জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক উচ্চারণের মাধ্যমে তারা ভাষার প্রতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে এবং এটি তাদের যোগাযোগের দক্ষতা উন্নত করতে সহায়ক হয়।
এছাড়াও, শিশুদের জন্য শিশুতোষ নাচ, ছড়াগান, আবৃতি এবং নাটিকা শেখার সুযোগ রয়েছে। এই কার্যক্রমগুলি শিশুদের সৃজনশীলতা এবং শিল্পকলা বিকাশে সহায়তা করে। নাচ এবং গান শেখার মাধ্যমে তারা শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকে এবং তাদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়। নাটিকা এবং আবৃতির মাধ্যমে তারা নিজেদের ভাবনা এবং অনুভূতিগুলো প্রকাশ করতে শিখে, যা তাদের সামাজিক দক্ষতা এবং আত্মপ্রকাশের ক্ষমতা উন্নত করে।
এই সব কার্যক্রমের মাধ্যমে আমরা আগামি দিনের সংস্কৃতিমনা নাগরিক তৈরিতে সহায়তা করছি। শিশুদের মধ্যে সৃজনশীলতা, নৈতিকতা, এবং সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ গড়ে তোলার মাধ্যমে আমরা একটি সুস্থ এবং সমৃদ্ধ সমাজের ভিত্তি স্থাপন করছি। এই শিক্ষার পদ্ধতি শিশুদের জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের পথ তৈরি করে, যেখানে তারা নিজেদের প্রতিভা এবং দক্ষতা বিকাশের সুযোগ পায়।
সার্বিকভাবে, খেলার মাধ্যমে শিক্ষা শিশুদের জন্য একটি আনন্দময় এবং ফলপ্রসূ অভিজ্ঞতা, যা তাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সফল হতে সাহায্য করবে।
(খ) প্রাথমিক শিক্ষা
প্রাথমিক শিক্ষা সাধারণত আনুষ্ঠানিক শিক্ষার প্রথম পর্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি প্রাক-প্রাথমিকের পরে এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আগে আসে, যা শিশুদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি তৈরি করে। প্রাথমিক শিক্ষা অর্জিত হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, যা অবস্থানের উপর ভিত্তি করে মৌলিক শিক্ষার প্রথম স্তর হিসেবে কাজ করে। এই স্তরে শিক্ষার্থীরা তাদের জীবনের প্রথম পাঠ গ্রহণ করে, যা তাদের ভবিষ্যতের শিক্ষার জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি গড়ে তোলে।
সরকারের নিয়মিত কারিকুলামের পাশাপাশি খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক চর্চার মাধ্যমে পাঠের বিষয়কে সহজবোধ্য করে তোলা হয়। এই কার্যক্রমগুলি শিক্ষার্থীদের শারীরিক এবং মানসিক বিকাশে সহায়ক হয়। খেলাধুলা শিশুদের মধ্যে দলবদ্ধ কাজের গুণাবলী এবং নেতৃত্বের দক্ষতা গড়ে তোলে, যা তাদের সামাজিক জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সাংস্কৃতিক কার্যক্রম যেমন গান, নাচ, নাটক এবং শিল্পকলা শিশুদের সৃজনশীলতা এবং আত্মপ্রকাশের সুযোগ দেয়।
শিক্ষার এই পর্যায়ে শুধুমাত্র একাডেমিক জ্ঞান অর্জনই নয়, বরং নৈতিক শিক্ষা প্রদানও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য “সততা স্টোর” (দোকানদার বিহীন দোকান) এর মত কার্যক্রমের মাধ্যমে বাস্তবসম্মত জ্ঞান প্রদান করা হয়। এই ধরনের কার্যক্রম শিশুদের মধ্যে সততা, নৈতিকতা এবং সামাজিক দায়িত্ববোধ গড়ে তোলে।
নিজের জায়গাকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার শিক্ষাকে বাস্তবে প্রয়োগ করার জন্য আকর্ষণীয় ময়লার ঝুড়ির মাধ্যমে নিদৃষ্ট স্থানে ময়লা ফেলার ব্যবস্থা রয়েছে। এই উদ্যোগটি শিশুদের মধ্যে পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করে এবং তাদেরকে পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীল হতে শেখায়।
অবৈতনিক শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শতভাগ উপবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে, যা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক ব্যবস্থা। নতুন বছরের প্রথম দিনে নতুন বই নিশ্চিত করে চলেছি আমরা, যাতে শিক্ষার্থীরা তাদের পাঠ্যবইগুলি সময়মতো পায় এবং তাদের শিক্ষার ধারাবাহিকতা বজায় থাকে।
বাচ্চাদের গণিত ও ইংরেজিতে পারদর্শী করে তোলার জন্য দূরশিক্ষণ কার্যক্রমের পাশাপাশি গণিত পাজেল সলভ এবং ইংরেজি রিডিং স্কিল ডেভলপমেন্ট কার্যক্রম অব্যাহত আছে। এই কার্যক্রমগুলি শিশুদের মধ্যে গণিতের প্রতি আগ্রহ এবং ইংরেজি ভাষার দক্ষতা বৃদ্ধি করতে সহায়ক হয়। গণিত পাজেল সলভের মাধ্যমে তারা সমস্যা সমাধানের দক্ষতা অর্জন করে, এবং ইংরেজি রিডিং স্কিল ডেভলপমেন্টের মাধ্যমে তারা ভাষার প্রতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে।
সার্বিকভাবে, আমাদের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যাবস্থা শিশুদের জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করে, যা তাদের ভবিষ্যতের শিক্ষার জন্য অপরিহার্য। এই স্তরে অর্জিত জ্ঞান এবং দক্ষতা তাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সফল হতে সাহায্য করবে, এবং তারা একটি সুস্থ, সৃজনশীল এবং দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে।
(গ) মাধ্যমিক শিক্ষা
মাধ্যমিক শিক্ষা মৌলিক শিক্ষার দ্বিতীয় এবং চূড়ান্ত পর্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়, যা শিক্ষার্থীদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এই পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা তাদের মৌলিক জ্ঞানকে আরও গভীরভাবে অনুধাবন করে এবং বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করে। মাধ্যমিক শিক্ষা শুধুমাত্র একাডেমিক জ্ঞানের উপর নির্ভর করে না, বরং এটি শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক বিকাশের জন্য একটি ভিত্তি তৈরি করে।
অত্র প্রতিষ্ঠান সরকারের নিয়মিত কারিকুলাম অনুসরণ করে মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি সুসংগঠিত এবং সুশৃঙ্খল শিক্ষা পরিবেশ রয়েছে, যেখানে তারা তাদের প্রতিভা এবং দক্ষতা বিকাশের সুযোগ পায়। সুযোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা পাঠ্যবইগুলোর বিষয়বস্তু এত আনন্দদায়ক, এত প্রাঞ্জল এবং বস্তুনিষ্ঠ ভাবে উপস্থাপন করে যে, শিক্ষার্থীরা ক্লাসেই তা শিখতে পারে। শিক্ষকদের দক্ষতা এবং তাদের পাঠদান পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের চিন্তা করতে শেখায়, শেখায় সৃজনশীল হতে এবং মনের অজান্তেই শেখায় নৈতিকতা, মূল্যবোধ, দেশপ্রেম এবং সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি।
মাধ্যমিক শিক্ষার এই পর্যায়ে বিজ্ঞান চর্চা, আইসিটি জ্ঞান, সামাজিক জ্ঞান, ক্রীড়া, বনায়ন, নেতৃত্ব এবং বিভিন্ন গুনাবলী তৈরীর জন্য নিয়মতান্ত্রিক কারিকুলামের পাশাপাশি বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষা প্রদান করা হয়ে থাকে। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন প্রকল্প, গবেষণা এবং সামাজিক কার্যক্রমের মাধ্যমে বাস্তব জীবনের সমস্যাগুলোর সমাধান করতে শিখে, যা তাদের আত্মবিশ্বাস এবং নেতৃত্বের গুণাবলী বিকাশে সহায়ক হয়।
এছাড়াও, মাধ্যমিক শিক্ষা শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি সুস্থ প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরি করে, যেখানে তারা একে অপরের সাথে সহযোগিতা করে এবং নিজেদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলে। এই সম্পর্কগুলি তাদের সামাজিক দক্ষতা এবং আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগের ক্ষমতা উন্নত করতে সহায়ক হয়।